ছবি তোলার হাতটা যে খুব একটা খারাপ না সেটা প্রথম আইইউটিতে যেয়ে বুঝতে পারেন নাফিস ফুয়াদ শুভ। তবে আইইউটিতে সেই ২০০৯-১০ সালের দিকে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি বা আইইউটিপিএস অতটা জনপ্রিয় ছিল না। বছরখানেক বাদে আইইউটিপিএস পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে যাওয়া আসা শুরু হয় সেখানে। দুর্ভাগ্য তখন তার হাতিয়ার হিসেবে ছিল তৎকালীন কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরা। সিনিয়র কয়েকজন বড়ভাই এবং খুব কাছের বন্ধু ইমরান শাহেদ এর দেখাদেখি কিনে ফেলেন শখের ডিএসএলআর ক্যামেরা। সময়কালটা ২০১১ এর শেষের দিকে। প্রায় সময়ই তিনি আর ইমরান বের হয়ে যেতেন তাদের ক্যামেরা নিয়ে, তাদের শখের ফটোগ্রাফি করার জন্য। আর ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তু হিসেবে তো আইইউটির ক্যাম্পাস এর থেকে ভাল কিছু হওয়া সম্ভব না। ততদিনে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির হাক ডাক কমবেশি শুরু হয়েছে। বেশ কিছু সিনিয়রও তৎকালীন সময়ে ওয়েডিং এ যেয়ে ‘ক্ষ্যাপ’ মেরে কমবেশি হাতখরচ চালাচ্ছেন এমন কাহিনীও ক্যাম্পাসে রটে যায়। এরকম বেশ কজন সিনিয়রদের মাঝেই তারা খুঁজে নিলেন যোবায়ের হোসেন শুভকে। কারণ ছিল এক, এই মানুষটা ছবি তোলার জন্য আর একজনকে অনুপ্রাণিত করতেন সর্বদা এবং কখনো কারো ছবি নিয়ে সরাসরি সমালোচনা না করে বরং ধরে ধরে শিখিয়ে দিতেন কোথায় আরও কী কাজ করলে ছবিটা ভাল আসত, আর দ্বিতীয় কারণ, যোবায়ের শুভ’র তোলা ছবিগুলি সবথেকে বেশি ক্রিয়েটিভ লাগত তাদের কাছে। আর একারণেই কিনা তারা সবসময় চেষ্টা করতেন তারা যোবায়ের শুভ’র কাছ থেকে নতুন কিছু শেখার, তার সাথে কাজ করার সুযোগ পাবার। ২০১২ এর জানুয়ারি মাসের ঘটনা। আগ্রহটা নাফিস আর ইমরানের মনে আরো জাকিয়ে বসে, যখন তারা দেখেন যোবায়ের শুভ তাদেরও এক বছরের জুনিয়র এক ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন সেই তথাকথিত ‘ক্ষ্যাপ’ মারতে অর্থাৎ কোন এক ওয়েডিং এ ফটোগ্রাফির কাজে। কিছুটা অবাকও হলেন। ছোট্ট ছেলেটা এসে শুভ ভাইকে আগে ‘ইমপ্রেস’ করে ফেলল!! এই জুনিয়র ছেলেটির নামই হল মাযহারুল ইসলাম রাফি। তারপর থেকে যোবায়ের শুভ’র কাছে ইমরান আর নাফিস এরও খানিকটা গো ধরেই বসে থাকা। তারাও একদিন যাবে ওয়েডিং শ্যুট করতে। শুভ হতাশ করলেন না। নিয়ে গেলেন একদিন তাদের। ফলাফল যোবায়ের শুভকেও হতাশ করেন নি নাফিস আর ইমরান। এরপর থেকেই টুকটাক যোবায়ের শুভর সাথে বাকি তিনজনের উঠাবসা, ছবি তুলতে যাওয়া। এভাবে চলতে চলতেই চারজন মিলে মার্চের এক রাতে বসে চিন্তা করে ফেলেন, নিজেরা মিলে একটা ফটোগ্রাফি গ্রুপ করে ফেললে কেমন হয়? ভাবনাটা আসে সেখান থেকেই। ছবি তোলার প্রতি আগ্রহটা কারোরই তো কম না। এই আগ্রহটাকে কাজে লাগিয়ে পেশায় রূপান্তর করা যায় যদি! যোবায়ের শুভও চিন্তা করলেন, অনেককে নিয়েই ছবি তুললাম, তবে এই তিন জুনিয়র তাদের মধ্যে সবথেকে ভাল কাজ করল, আগ্রহ দেখাল! তিনিও সাই দিলেন নির্দ্বিধায়। মার্চের ঐ রাত থেকেই শুরু হয়ে গেল ড্রীম উইভারের পথচলা। যোবায়ের শুভ প্রধান চালক, সাথে থাকবেন নাফিস, ইমরান এবং রাফি। তার দুদিন বাদেই শুভ’র কাছে ফোন এল – ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং তৎকালীন আইইউটির লেকচারার রেজওয়ান ভাই এর। তার বিয়ের প্রোগ্রাম পাবনাতে। মার্চ এর ২৯! শ্যুট করতে হবে। এই টেট্রার একটা গ্রুপ হবার পর প্রথম শ্যুট! আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রীম উইভারের প্রথম শ্যুট।