মাজহারুল ইসলাম রাফি

এই চারজনের মধ্যে কনিষ্ঠতম সদস্য মাজহারুল ইসলাম রাফি। তবে সবার ছোট হলেও রাফির ফটোগ্রাফি জীবনের গল্পটা কিন্তু কম ছোট নয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর যখন মাস তিনেকের ছুটি ছিল সেই সময় বাসা থেকে তাকে কিনে দেওয়া হয় ক্যাননের কমলা রঙের একটি ডিজিটাল ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দিয়েই শখের বশে করতেন ফটোগ্রাফী।
২০১০ এ উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হলেন আইইউটিতে। সেখানে একদিন তার তোলা কিছু ছবি নিয়ে তিনি যান বড়ভাইদের কাছে। উদ্দেশ্য, আসন্ন ‘ব্রেক দ্য সার্কেল’ এ তার কোন ছবি এক্সিবিশনের জন্য দেওয়া যায় কিনা। এর মধ্যে এক বড় ভাই দারুনভাবে তার স্ট্রীটে তোলা এক ছবি এডিট করে এক্সিবিশনের জন্য জমা দিতে বলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম বর্ষে পড়া এই ছেলেটির ছবি জায়গা করে নেয় এক্সিবিশনে।
২০১১ তে বন্ধুরা মিলে গিয়েছিলেন সিলেট ট্যুর এ। সেখানে যেয়ে লাউয়াছড়াতে নিজের সেই ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে রেললাইনের একটা ছবি তুলেছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাকর এক্সিবিশন টিটিএল (থ্রু দ্য লেন্স) এ আইইউটির একমাত্র ছবি হিসেবে ২০১২ সালের এক্সিবিশনে জায়গা করে নেয় সেই ছবি। তারপর থেকেই ক্যাম্পাসে সিনিয়রদের চোখে পড়েন রাফি।
যে ডিজিটাল ক্যামেরাতেই এত ভাল ছবি তুলতে পারে, ডিএসএলআর হলে নিশ্চয় আরও ভাল ছবি তুলতে পারবে। বড় ভাইদের প্রেরণায় বাসায়্য আবদার করে বসেন একটা ডিএসএলআর এর। নিজের জমানো উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্তির টাকা এবং উদ্ভাসে ক্লাস নেবার সুবাদে জমানো টাকার সাথে বাসা থেকে কিছু টাকা নিয়ে ’১১ তে কিনে ফেলেন নিজের প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা, নাইকন ডি৫০০০।
ক্যামেরা কেনার পরেই ২০১২তে জানুয়ারির ১৮ তারিখে যোবায়ের শুভ তাকে নিয়ে যান ফোর সিজনস এ, একটা ওয়েডিং শ্যুটে। তখন ছিল না নরমাল একটা ফ্ল্যাশও। সেই অবস্থায় নিজের ইচ্ছামত বেশ কিছু ছবি তোলেন রাফি। শুভকেও মুগ্ধ করে ফেলেন তার তোলা ছবি দিয়ে।
দুর্ভাগ্য পরদিন আর এক বন্ধুকে ক্যামেরা কিনে দেবার উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা সিটিতে যেয়ে হারিয়ে বসেন নিজের কেনা ডিএসএলআরটা। রাফির অগ্রগতিতে বড় একটা ধাক্কা ছিল সেটা। অতঃপর উপায় না দেখে নিজের আইইউটি থেকে পাওয়া সমস্ত বৃত্তির টাকা তুলে কিনে ফেলেন আর একটি ডিএসএলআর, ক্যানন ৫৫০ডি। এর পর পরই মার্চের কোন এক রাতে যোবায়ের শুভ’র ফোন – ‘আমরা একটা ফটোগ্রাফি দল করব, তুই থাকবি কি থাকবি না?’ শুভ ভাই ফোন দিয়েছেন, দ্বিতীয় চিন্তা করার অবকাশ নেই। চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যান। ফেসবুকে প্রথম দিকে তার ছদ্মনাম ‘রাফ রাফি’ ছিল বলেই কিনা ড্রীম উইভারের সকলে তাকে ডাকেন সেই ‘রাফ রাফি’ নামেই।
রাফির ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। মাধ্যমিক দিয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবং উচ্চমাধ্যমিক মুহসীন কলেজ থেকে। স্নাতক জীবনে পড়াশুনা করেছেন কম্পিউটার কৌশল নিয়ে।