যোবায়ের হোসেন শুভ

বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকেই প্রথম বর্ষের শেষে বন্ধুরা সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। ইনানী বিচে বন্ধুরা সবাই একসাথে লাফ দিবেন, সেই মুহুর্তটার ছবি তুলতে হবে। ক্যামেরা বলতে ছিল তৎকালীন সনি সাইবার শট ডিজিটাল ক্যামেরা। বন্ধুরা সবাই লাফও দেন, একেক জনের পর একেক জন চেষ্টাও করলেন কিন্তু মনমত সেই ছবি আর ওঠে না। একটা ছেলেই শুধুমাত্র সেই অসাধ্য কাজটা করতে পারল। সেই ছবি ঠাই পেল প্রত্যেক বন্ধুর ফেসবুক কভারে। সাথে ফটো কার্টেসী – যোবায়ের হোসেন শুভ। সেই থেকে ফটোগ্রাফার শুভ’র নামডাক।
যোবায়ের হোসেন শুভ, ড্রীম উইভারের প্রধান মুখ। ফটোগ্রাফি জগতে তার যাত্রাটা অনেক দিনের, অনেক বাঁধা পেরিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই মূলত ছবি তোলার পূর্ণ সত্ত্বা প্রকাশিত হলেও তার পথচলাটা শুরু হয়েছিল সেই ছোট্টবেলায় কুমিল্লায় থাকা কালে। সেসময় তার বাবা শখ করে কিনে দিয়েছিলেন অটো রোলের ইয়াসিকা ক্যামেরা। তা দিয়েই ছোট্ট শুভ ঘুরে বেড়িয়েছেন কুমিল্লার রাস্তায় রাস্তায়, ছবি তুলে বেড়িয়েছেন সেই অটোরোলের ক্যামেরা দিয়েই।
২০১১ সালে বন্ধুদের দেখাদেখি ঝোঁক বাড়ে ডিএসএলআর এর প্রতি। কিন্তু বাসায় বললে কখনোই কিনে দিবে না। অগত্যা নিজের টিউশনি করে এবং গেমিং প্রোডাক্ট সেল করে জমানো টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন শখের ডিএসএলআর, ডি৭০০০। সাথে ছিল ১৮-১০৫ লেন্স, ৩৫মিলিমিটার লেন্স এবং একটি ফ্ল্যাশ। শুধু ক্যামেরা কিনেই ক্ষান্ত ছিলেন না শুভ। প্রতিনিয়ত গুগল করে এবং ইউটিউব দেখে শিখেছেন সেই ক্যামেরার নিত্য নতুন ফাংশন এবং বিভিন্ন কাজ। ছবিও তোলা হত ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে। বনানী ওভারব্রীজ থেকে তোলা একটি ছবি জায়গা করে নেয় ২০১১ এর আন্তর্জাতিকমানের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় এক্সিবিশন ‘ব্রেক দ্য সার্কেল’ এ। ২০১২ এর এক্সিবিশনেও জায়গা পায় শুভ’র তোলা ছবি।
যখন শেষ বর্ষে তখন শুভ’র ইচ্ছা হল ব্যাচের সব বন্ধুর বিভিন্ন পোজে একক ছবি তুলে একটা এ্যালবাম করবেন। নিজের ক্রিয়েটেভিটি দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে তোলা সেই ছবিগুলি দেখেই সবাই বুঝে গেল – এই ছেলেটা আলাদা। তার মধ্যে ফটোগ্রাফির আলাদা একটা প্রতিভা আছে। সেখান থেকেই বন্ধু তাঞ্জিব এর বোনের বিয়েতে ছবি তোলার জন্য অফার পান শুভ। পরিচিত সিনিয়র, বড় ভাই থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও একে একে সবাই তাদের বিভিন্ন কাজের ছবি তোলার জন্য খুঁজতে থাকেন এই শুভকে।
বিয়ের ছবি তুলতে গেলে একা সম্পূর্ণটা কভার করা কঠিন হয়ে যায়। তাই সাথে নিয়ে যেতেন অন্য কাউকে। কখনো বা বন্ধু, কখনো বা জুনিয়র। সেখান থেকেই আলাদা করে নজর কাড়েন রাফি, নাফিস এবং ইমরান। আর তারপর সবাইকে নিয়ে প্লাটফর্ম করে শুরু করেন নিজের কোম্পানি – ড্রীম উইভার।
যোবায়ের হোসেন শুভ’র ছোটবেলা কেটেছে কুমিল্লা শহরে। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে পাড়ি জমান ঢাকার নটরডেম কলেজে। স্নাতক জীবনে পড়াশুনা করেছেন যন্ত্রকৌশল নিয়ে।